আত্মজৈবনিক আখ্যানের অসামান্য কথাশিল্পী আনি এরনো | মাসুদুজ্জামান | নোবেল পুরস্কার ২০২২

কয়েক দশক ধরেই তিনি অতীত জীবনের সবচেয়ে অপমানজনক, ব্যক্তিগত এবং কলঙ্কজনক মুহূর্তগুলিকে সূক্ষ্ণভাবে অভিজ্ঞ শল্যবিদের মতো কাটাছেড়া করছিলেন। “আমি আমার নিজেকে নিয়েই নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করব,” কথাগুলি আনি এরনোর, ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত স্মৃতিকথা ‘লজ্জা’-য় এরকমই লিখেছিলেন। এবার সেই কাজের জন্যই সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মাননা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন তিনি। তাঁর লেখায় সেইসব নারীর কথা আছে যারা অন্য অনেকের মতোই উঠে এসেছেন ফ্রান্সের শ্রমজীবী শ্রেণির ভেতর থেকে। তাঁর রচনা নানা দিক থেকে তাই গুরুত্বপূর্ণ – নারীর জীবন ও সমকালীন সমাজের নিখুঁত নানন্দিক প্রতিচ্ছবি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিকও। নিজেই জানিয়েছেন, ফ্রান্সের ছোট্ট নরম্যান্ডি শহরে দরিদ্র একটি পরিবারে তিনি বেড়ে উঠেছেন। গত শতকের ষাটের দশকে তাঁ।র একটি অবৈধ গর্ভপাত ঘটে, গার্হস্থ্য জীবন নিয়ে ছিলেন অসন্তুষ্ট আর জড়িয়ে পড়েছিলেন ভাবাবেগপূর্ণ একটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে।

নোবেল কমিটি, নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন একজনকে সম্মানিত করলো যাঁর লেখা তীব্রভাবে ব্যক্তিগত এবং সাধারণ অভিজ্ঞতার সহজ সাবলীল ভাষিক বর্ণনায় ঋদ্ধ। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব ম্যাটস মালম স্টকহোমে সংবাদ সম্মেলনে যে কথাগুলি বলেছিলেন তাও উল্লেখযোগ্য। সাহস, নিখুঁত তীক্ষ্ণ রীতি, ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়, বিচ্ছিন্নতা আর সম্মিলিত সংযম উন্মোচন করিয়ে দেখিয়েছেন তিনি।

পুরস্কার পাওয়ার অব্যবহিত পরের সংবাদ সম্মেলনে ৮২ বছর বয়সী এনরো নিজেই লিখে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় আমার দায়িত্ব লিখে যাওয়া।” বিশেষ করে, নারীরা যে বৈষম্য আর সংগ্রামের মুখোমুখি হন তাই নিয়ে লিখে যাওয়ার দায় বোধ করছেন তিনি। “একজন মহিলা হিসাবে আমার অবস্থান থেকে বলতে পারি, আমার মনে হয় না যে নারীরা স্বাধীনতা, ক্ষমতায় সমানাধিকার অর্জন করেছি।”

নোবেল পুরস্কারের দিকে দৃষ্টি দিলেও কথাটা বোঝা যাবে। তিনি ১৭তম মহিলা যিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯০১ সালে প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে ১১৯ জন লেখককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে৷ ২০২০ সালে মার্কিন কবি লুই গ্লুককে দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে তিনি পুরস্কারটি পেলেন।

শুরুর দিকে এনরো আত্মজীবনীমূলক কথাসাহিত্য লিখেছিলেন, কিন্তু পরে সেই ধরনের লেখা থেকে সরে এসে এমন একধরনের রচনারীতি উদ্ভাবন করেন যাকে প্রচলিত অর্থে স্মৃতিকথা বলে মনে হলেও ঠিক ঠিক স্মৃতিকথা নয়। তিনি তাঁর কাজকে এভাবে কল্পকাহিনী বা নন-ফিকশন কোনো কিছুর দ্বারাই চিহ্নিত করার পক্ষপাতী নন। আসলে তিনি যা কিছু লিখেছেন তার প্রতিটি শব্দই আক্ষরিক এবং বাস্তবিকভাবে সত্য। কিন্তু একইসঙ্গে কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতার দ্বারা ঋদ্ধ।

গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে তিনি যে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন – অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা ও গর্ভপাত, প্রেম ও প্রেমের সমাপ্তি, বিয়ে এবং মাতৃত্ব সম্পর্কে তাঁর ভিন্নমত লক্ষ করে সামাজিকভাবে যারা রক্ষণশীলরা তাঁরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেইসব লেখা অসংখ্য পাঠককে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল।

এরনো তাঁর লেখাকে রাজনৈতিক কাজ বা লেখালেখি বলে বর্ণনা করেছেন। এইসব রচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক বৈষম্যকে প্রকাশ করা। তিনি তাঁর ভাষা ব্যবহারকে ‘ছুরির’ সাথে তুলনা করেছেন। প্রভাবিত হয়েছেন প্রখ্যাত ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়েরে বোর্দিউ এবং প্রখ্যাত নারীবাদী লেখক সিমোন দ্য বোভেয়ারের দ্বারা। ১৯৬৮ সালের মে মাসে ফ্রান্সে সামাজিক আন্দোলনের যে সূত্রপাত ঘটে, তিনি সেই আন্দোলনের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। সেই সময় ফ্রান্সে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং নাগরিক আন্দোলন চলছিল। এরনোর বক্তব্য বেশ স্পষ্ট, “আমার লেখার বিষয়আশয় ও ভাষা নিষ্ঠুরভাবে প্রত্যক্ষ, শ্রমজীবী, এমনকি কখনও কখনও অশ্লীল।”

ফরাসি সংস্কৃতি এবং সমাজের সমান্তরালে তিনি তাঁর নিজের জীবন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকে স্থাপন করে নারী ও মানুষের সর্বজনীন সংগ্রামকে উপজীব্য করেছেন। সেদিক থেকে ভাবলে ফ্রান্সের প্রথাগত ক্যাথলিক মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে তাঁর লেখার অবস্থান। তিনি অনেক বেশি ধর্মনিরপেক্ষ, সহজগ্রাহ্য এবং যৌনমুক্তির মধ্য দিয়ে তীব্র সামাজিক পরিবর্তনের বাঁকগুলিকে তুলে ধরেছেন।

নিউ ইয়র্কের একজন সাহিত্যের শিক্ষক বলেছেন, “যখন তিনি লেখালেখি শুরু করেন তখন এই রীতিটি প্রতিষ্ঠিত করাটা ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জের ব্যাপার, যেভাবে তিনি নিজেকে এবং তাঁর জীবনকে ফ্রান্সের সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত করে মূল ধারায় নিয়ে আসছিলেন, এস্টাবলিশমেন্টের পক্ষে সেটা মেনে নেয়া সহজ ছিল না। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শ্রমিক শ্রেণির মধ্য থেকে আসা একজন নারীর পক্ষে এভাবে সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা সত্যি বিস্ময়কর, প্রায় অসম্ভব। তবু তিনি দৃঢ় মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে খুব শক্তিশালী অবস্থান নিতে পেরেছেন। বিশেষকে নির্বিশেষ করে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

এনরোর জন্ম ১৯৪০ সালে ফ্রান্সের ছোট্ট শহর নরম্যান্ডির এক শ্রমজীবী ক্যাথলিক পরিবারে। বাবা-মায়ের ছিল একটা মুদি দোকান ও ক্যাফে। তাঁর বাবা ছিলেন ভীষণ রাগী আর আচরণও ছিল দুর্বিনীত। এনরোর বয়স যখন ১২ বছর, তখন বাবা তাঁর মাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনাটি এনরোকে ভীষণভাবে হতবাক করে এবং তিনি একে ‘লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছেন। মর্মান্তিক এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন : “আমার বাবা জুন মাসের এক রোববার, সকালে, আমার মাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।”

একটা সাক্ষাৎকারে এনরো বলেছেন, কলেজে থাকতেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। কিন্তু প্রকাশকরা সেই লেখাকে ‘খুব উচ্চাভিলাষী’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর যখন তাঁর বয়স তিরিশ বছর, দুই সন্তানের মা আর শিক্ষকতা করছেন, ততদিন পর্যন্ত আর লেখালেখি করেননি। ১৯৭৪ সালে আবার সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আবির্ভাব ঘটে এবং তিনি ‘ক্লিনড আউট’ শীর্ষক একটি গভীর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস রচনা করেন। কিন্তু সেই লেখালেখি করাটা তাঁর জীবনের জন্য খুব সহজ ছিল না। স্বামী সাহিত্যকে যিনি তুচ্ছ জ্ঞান করতেন, ফলে স্বামীর কাছে লেখালেখির বিষয়টি গোপন রেখেই তাঁকে লেখালেখি করতে হচ্ছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালে তাঁর তৃতীয় বই ‘এ ফ্রোজেন ওমেন’ প্রকাশের পর বিয়ে ও মাতৃত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে যায় এবং এই বিচ্ছেদের পর তিনি আর কখনও বিয়ে করেননি। কেন করেননি, সেকথাও বলেছেন এক সাক্ষাৎকারে। একা থাকার স্বাধীনতাকে উপভোগ করতে চেয়েছেন বলেই এই সিদ্ধান্ত।

১৯৯২ সালে যখন তাঁর ‘সিম্পল প্যাশন’ বইটি বেরয় তখন ফ্রান্সের পাঠকমহলে সাড়া পড়ে যায় আর লেখক হিসেবে তিনি বাণিজ্যিক সাফল্য পেতে শুরু করেন। বিবাহিত একজন রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের বিস্তারিত অনুপুঙ্খ সম্পর্কের বর্ণনা আছে এই বইতে। নারীর কামবাসনার খোলামেলা সম্পর্কের কথা থাকার কারণে অপ্রস্তুত ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীলরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু নৈতিকতাহীন যৌন-আকাঙ্ক্ষার অকপট চিত্রায়নের জন্য তরুণতর পাঠকদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। প্রথম দুই মাসে বইটির দুই লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। এনরো পরে জানিয়েছেন, “পুরুষ ও নারীরা আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, বলেছিলেন, এরকম একটা বই লেখার সুপ্ত বাসনা তাদেরও ছিল।”

এনরোর রচনাবলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর জীবনের ঘটনাগুলিকে নিরীক্ষণ-পুনর্নিরীক্ষণ করে দেখেতে চেয়েছেন। নিজের গর্ভপাতের বিস্তৃত ঘটনা নিয়ে ২০০০ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হ্যাপেনিং’ শীর্ষক স্মৃতিকথা। ১৯৬৩ সালে তিনি যখন কলেজের ছাত্রী তখন এই ঘটনাটি ঘটে। এরপর ‘সিম্পল প্যাশন’ বইতে ওই রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের যে বর্ণনা রয়েছে সেই ঘটনাটি তিনি তাঁর ডায়রিতে লিখে রেখেছিলেন। ডায়রির পাতায় উৎকীর্ণ সেই লেখা নিয়ে ১৯৯০ সালে প্রকাশ করেন ‘গেটিং লস্ট’ নামের বইটি। এতে ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অব্দি যা-যা ঘটেছিল তার পরিপূর্ণ অবিচ্ছিন্ন অনাবৃত বর্ণনা রয়েছে।

সেই বর্ণনায় আদিম প্রত্যক্ষ জৈবিক তাড়না ও উন্মাদনার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন এনরো। টাইম পত্রিকায় ডোয়াইট গার্নার বইটির পর্যালোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, “তাঁর কণ্ঠের আদিম প্রত্যক্ষ মসৃণতা ভীষণভাবে টেনে ধরে। এটা এমন এক ধরনের ভাষা যেন মনে হতে থাকে তিনি একটা ছুরি দিয়ে টেবিলের উপর প্রতিটি বাক্য খোদাই করছেন।”

তাঁর জীবনের আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনার কথা লিখতে তাঁর কয়েক দশক লেগে গিয়েছিল। ১৯৫৮ সালের এক গ্রীষ্মে যখন তাঁর বয়স ১৮ বছর, বিভ্রান্তিকর এক যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এতে তাঁর তীব্র গ্লানিবোধ হয়. মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, লজ্জা ও ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন, “আমি লজ্জার বিশাল স্মৃতির দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছি, অন্য যে কিছুর চেয়ে তা ছিল বিশদ ও অবিশ্বাস্য, লজ্জার অনন্য উপহার।” ‘একটি মেয়ের গল্প’ নামের বইতে পরে এসব কথা লিখেছেন তিনি।

পণ্ডিত, সমালোচক এবং সহযোগী লেখকরা তাঁর লেখার প্রশংসা করেন এভাবে যে, নারী, বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির সদস্যদের কাছে এসব স্মৃতি হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত থেকে সর্বজনীন সম্মিলিত অভিজ্ঞতার অংশ। ফরাসি লেখক এদুয়ার্দে লুই বলেছেন, এই হলো সাহিত্য, এটা সাহিত্য নয় – এরকম বর্গীকরণকে এনরো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। “রূপক, সুন্দর বাক্য, আকর্ষণীয় চরিত্র এ সবের প্রতিও তাঁর কোনো দুর্বলতা নেই। এভাবেই সাহিত্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিপ্লব” ঘটিয়ে ফেলেছেন। নিজের শ্রমিক শ্রেণির জীবন ও শিকড়ের কথা লিখেছেন। “আনি এনরো – বাহ্ কী সুন্দর, লেখাকে সাহিত্যের এরকম সনাতন সংজ্ঞার সাথে মানানসই করে তোলার চেষ্টা করেননি। নিজের মতো করে তিনি নিজের লেখা লিখেছেন। তাঁর লেখা তাই অনন্য ও নিজস্ব।

এনরো অনেক দিন ধরেই ফ্রান্সে খ্যাতিমান ছিলেন, কয়েক দশক ধরে তাঁর লেখা ব্যাপকভাবে অনূদিত হয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁর স্মৃতিকথা ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল বুকার পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকমহলে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। যুদ্ধোত্তর নতুন প্রজন্মের স্মৃতিকথা হিসেবে এই বইতে ফ্রান্স কীভাবে যৌনমুক্তি ও ভোগবাদের দিকে ঝুকে পড়ছিল সেসব কথা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। বইটিকে একটি একক আত্মজীবনী শুধু নয়, চিহ্নিত করা যায় যৌথ-আত্মজীবনী বলে।

এরনোর ভক্তরা বলে থাকেন, সাধারণ অভিজ্ঞতাকে অসাধারণ করে প্রকাশ করেন বলেই তাঁর লেখা অসাধারণ হয়ে ওঠে। বিয়ে ও মাতৃত্বের দুরবস্থা, প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা ও তাই নিয়ে বিভ্রান্তি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বয়স্ক বাবা-মায়ের সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি দুঃখের কথা লিখেছেন। তাঁর লেখার স্বর ও ভঙ্গি বিশেষভাবে অনুভূতিহীন, এমনকি যখন তিনি খুব কঠিন বিষয়বস্তু নিয়ে লেখেন তখনও তাঁর গদ্য এরকম অনুভূতিহীন, শীতল ও আকর্ষক থাকে। অথচ কী ধরনের লেখা পড়ছেন পাঠকের পক্ষে বলা কঠিন হয়ে ওঠে। এটি অটোফিকশন নয় আবার সূক্ষ্ণভাবে দেখলে স্মৃতিকথাও নয়। তিনি নিজেই যেন তার নিজের ঘরানার বিশিষ্ট একধরনের রীতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন এবং সেটি অনেক নিখুঁত আর পাঠকের মনোজগতে তীব্র অভিঘাত তৈরি করে।

দীর্ঘদিন ধরেই মনে করা হচ্ছিল এনরো নোবেল পুরস্কার পাবেন, যে পুরস্কারটি দেয়া হয় একজন লেখকের সামগ্রিক অবদানের জন্য। অবশেষে তিনি প্রায় ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনারের সেই পুরস্কারটি পেলেন। এবার পুরস্কার ঘোষণার আগে ১১৮ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে ৯৫ জন ছিলেন ইউরোপীয় অথবা উত্তর আমেরিকার লেখক। এর মধ্যে আবার মাত্র ১৬ জন ছিলেন নারী। সাংবাদিকরা যখন একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জিজ্ঞেস করছিলেন, তখন সুইডিশ একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের মধ্যে বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কথা। বোঝা যায়, এতদিন ধরে যে ঔপন্যাসিক, কবি বা নাট্যকারদের পুরস্কার দেয়া হচ্ছিল, নোবেল পুরস্কার কমিটি তা থেকে সরে আসছে। এর আগে আত্মজীবনী লেখার জন্য রাজনীতিবিদ উইস্টন চার্চিল, দু-জন দার্শনিক ব্রাট্রান্ড রাসেল ও ইলিয়াস কানেত্তি, বাচিক ঐতিহাসিক সভেতলানা, ছোটাগল্পকার এলিস মুনরো এবং গীতিকার বব ডিলান সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন যা ছিল নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা। এদিকে পুরস্কারের পাল্লাটা ইউরোপীয়দের দিকে ভিষণভাবে ঝুকে আছে। চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন কেন আবারও একজন ইউরোপীয় লেখককে পুরস্কার দেয়া হলো তার কৈফিয়ত দিলেন, বিশেষ করে একজন নারী লেখককে বেছে নেয়ারা কথাও বললেন। সেই সঙ্গে রাজনীতি নয়, মানসম্পন্ন সাহিত্যই হচ্ছে পুরস্কার পাওয়ার প্রধান মাপকাঠি, জানালেন তাও-ও।

এরনোর কাছে লেখালেখিটা অবশ্য জীবনেরই অংশ। তবে স্মৃতি অথবা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু একটা লিখতে হবে, এমনটা মনে করেন না তিনি। ক্রমাগত আবিষ্কার ও আত্ম-আবিষ্কারের মধ্যে লেখালেখির জগতে পরিভ্রমণ করতে চান। পুরস্কার পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এরকমই বলেছেন, “আমার কাছে অস্পষ্ট বিষয়ের ওপর আলোকপাত করাই হচ্ছে আমার লক্ষ্য। লেখাই হচ্ছে জ্ঞানের পথ।” এভাবে তিনি জ্ঞানের কথা বললেও তাঁর রচনা তীব্রভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু নোবেল পুরস্কারের যে একটা রাজনৈতিক মাত্রা আছে, রাজনৈতিক যুক্তি দিয়ে নোবেল একাডেমি কখনই পুরস্কার প্রদানের ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে না। এই রাজনীতি, বলাবাহুল্য, মানুষের ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবন, তার সংকট ও সম্ভাবনার রাজনীতি। একটু গভীরভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে, আনি এরনো এবার যে পুরস্কার পেলেন সেই পুরস্কারটিরও রাজনৈতিক মাত্রা আছে। তাঁকে পুরস্কার প্রদান উপলক্ষ্যে নোবেল কমিটি যে বিবৃতিটি দেয় সেটা ছিল এরকম : “সাহস এবং পর্য়বেক্ষণের তীক্ষ্ণতা দিয়ে তিনি নিজের শেকড়, ব্যক্তিগত স্মৃতির সম্মিলিত সীমাবদ্ধতাগুলি আবিষ্কার করেছেন।” এই বিবৃতিতে যে সাহসের কথা বলা হয়েছে, সেই সাহস একজন নারীর সাহস। তাঁর শেকড়ের যে কথা বলা হলো, তাও তাঁর শ্রেণিগত অবস্থানের কথা, যে শ্রেণি পরিচয় একজন ব্যক্তিমানুষের সামাজিক অবস্থান কতটা উঁচু আর নিচু, অর্থাৎ সামাজিক হায়ারার্কি বা উচ্চাবচ অবস্থানটি আসলে কী, সেটা বুঝিয়ে দেয়। এরনো নিজেই তো শ্রেণিগতভাবে উঠে এসেছেন ফ্রান্সের শ্রমজীবী দরিদ্র একটা পরিবার থেকে। এই সবকিছুকে আমরা যদি বিবেচনা করি, তাহলে তাঁকে পুরস্কার দেয়ার পেছনেও যে রাজনীতি আছে, সেটা বোঝা যায়। সেই রাজনীতি তাঁর শ্রেণি-অবস্থান ও নারীবাদী রাজনীতি। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অস্তিত্ব ও ঐতিহাসিক কিছু নির্ধারক। ফলে, সহজেই বোঝা যায়, তাঁর লেখা অস্তিত্বের অন্বেষা, পুরুষতান্ত্রিক আবিধপত্য আর ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বলেই পাঠকেরা পড়েন। নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবিটি তাদের দৃষ্টি এড়ায় না।

আনি এরনোর নোবেল প্রাপ্তির মাধ্যমে আরেকটি দিক পাঠকের সামনে চলে এসেছে। সেটা হলো তাঁর ব্যক্তিজীবন। সিমন দ্য বোভেয়ার বলেছিলেন, যা কিছু ব্যক্তিগত তাও রাজনৈতিক। এরনোর লেখা ঠিক এরকমই। তাঁর লেখায় উপস্থাপিত অধিকাংশ ঘটনাই মূলত ব্যক্তিগত ঘটনা। একটি গোপন গর্ভপাত – মৃত্যুর ঝুকি, অপমান, কষ্ট, সহিংসতা – এর সবই ব্যক্তিগত। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত ঘটনাও যে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে, সেটাই তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৩ সালে এরনো তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন : এই মেয়েটি (নিজে) ভয়, যন্ত্রণা, অপরাধবোধে কাঁপছিল, কেননা তাকে একটি গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই গর্ভপাতেরও একটা বৈশ্বিক মাত্রা আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিন আগে গর্ভপাতকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। গর্ভপাত নিয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও বিতর্ক আছে। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেসব দেশে এই গর্ভপাতের অধিকার অর্জিত হয়েছিল সেসব দেশেও একে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এরনোর পুরস্কারপ্রাপ্তির পর সমালোচকেরা এই দিকটার কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে গর্ভপাত এখনও পশ্চিমের একটা বড় সমস্যা। এরনোর পুরস্কার পাওয়ার এটিও একটি কারণ হতে পারে। একাডেমির পুরস্কার কমিটি হয়তো একে গুরুত্ব দিয়েছে।

আনি এরনোকে কেউ কেউ উল্লেখ করেন আত্ম-লিখনের (self-writing) প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু তাঁর লেখাকে এভাবে ব্যাখ্যা করলে ভুল হবে। তিনি উপন্যাস লেখেননি, আবার আত্মজীবনীও নয়। তিনি যা লিখেছেন সেটা তাঁর জীবন, আবার জীবন নয়ও। তিনি যা বর্ণনা করেছেন, সেই বর্ণনা ব্যক্তি-অভিজ্ঞতার বর্ণনা। কিন্তু এর সবই ব্যক্তি-আমিকে ছাড়িয়ে গেছে। শরীর, শিক্ষা, যৌনস্বত্ব ও অবস্থা, সামাজিক গতিপ্রকৃতি, অন্যের অস্তিত্ব, অসুস্থতা, শোক; সর্বোপরি সময় এবং সেই ইতিহাস, যার প্রেক্ষাপটে জীবন বদলে বদলে যাচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে, নবায়িত হচ্ছে। জীবনের কথা তিনি লিখেছেন, কিন্তু লিখেছেন ‘নৈর্ব্যক্তিক আমি’ হয়ে, অথবা বলা যায় বহুব্যক্তিকে জড়িয়ে (ট্রান্সপারসোনাল) রীতিতে। এ কারণেই খুব কমই তাঁর লেখায় ‘লৈঙ্গিক আমি’ (gendered I) অথবা নারীর একান্ত ব্যক্তিক আমিকে পাওয়া যায়, যেমনটা দেখতে পাই অন্য নারীদের লেখায়। তিনি ইতিহাসকে জীবন্ত মাত্রা দিয়েছেন, যে ইতিহাস সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ তাঁর লেখায় ব্যক্তি-নারী আর ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকেনি। ঘনিষ্ঠতা এবং সমাজের সেই মিলনস্থলে চলে গেছেন যেখানে ভিতরের কোমল মানুষটির সঙ্গে হিংস্রতার সংঘর্ষ হয়, আর এ থেকেই জন্ম নেয় লজ্জা। তাঁর বইগুলি সেদিক থেকে ভীষণ মর্মস্পর্শী, হৃদয়বিদারক। কেননা, তাঁর বইয়ের ঘটনাগুলি সর্বদাই মানুষের সবচেয়ে দুরবস্থার পটভূমিতে লেখা; আর তুলে ধরেছে মানুষের ব্যক্তি-অবস্থান ও অবস্থার নির্মম সত্যকে।


এরনোর লেখাগুলো – কী নারী, কী পুরুষ – সব শ্রেণির পাঠককে তার নিজেকে সনাক্তকরণের দিকে উস্কে দেয়। তাঁর রচনাবলি আসলে নারী-পুরুষের আত্মদর্শনের আখ্যান। নারী পাঠকেরা তাঁর লেখার মধ্যে অব্যাহতভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে পুরুষ চরিত্রগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিকতার সূত্রে নিজেদের পরিচয়কে চিহ্নিত করতে পারে, বুঝতে পারে। আবার পুরুষ পাঠকেরা নারী চরিত্রগুলোর সঙ্গে দ্বান্দ্বিকতা বা সাংঘর্ষিকতার সূত্রে নিজেদেরকে চিহ্নিত করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। অর্থাৎ, তাঁর লেখা – নারী লেখকদের লেখা যেমন হয়ে থাকে – তেমন নয়। বরং তাঁর লেখা পড়ে নারী চিনতে পারে নিজেকে, পুরুষও চিনতে পারে নিজেকে। পারস্পরিক সংঘাত, বিরোধ, দ্বন্দ্ব, সন্ত্রাস ইত্যাদির মধ্য দিয়ে এই চেনাটা ঘটতে থাকে। খুব সহজেই পাঠক সেটা উপলব্ধি করতে পারে। নিজের জীবনের গল্প নয়, তাঁর আখ্যানগুলি যেন সবার জীবনের গল্প। এই জীবন আবার অতীত মুহূর্তগুলির সম্প্রসারিত জীবনকথা; তাদের সংবেদনশীলতার কথা, সামগ্রিকভাবে আমাদের সবার জীবনের ইতিবৃত্ত। তিনিই হচ্ছেন প্রথম ফরাসি নারী লেখক যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন।

গ্রামীণ রোমানিয়াতে ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, চিলিতে একুশ শতকের প্রথম দশকে, অথবা বর্তমান ইথিওপিয়ায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, কৃষক ও শ্রমিক-শ্রেণির সংস্কৃতিতে ক্যাফে বা মুদি দোকানের বিকাশ ও প্রাধান্যের বিষয়টি লক্ষণীয় একটি দিক। এই ক্যাফে বা ছোট ছোট দোকানের কাজের সঙ্গে নারীও যুক্ত ছিল। সর্বত্রই আবার একটা আলোকিত অবস্থায় উঠে আসার জন্য এই নারীদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু সেটা কষ্ট ও যন্ত্রণা ছাড়া ঘটেনি। নিঃসন্দেহে আমাদের সেই সব অনুবাদকের কথা মনে রাখতে হবে যাঁরা প্রায় সারা পৃথিবী জুড়েই নিজেদের ভাষায় অনুবাদের মধ্য দিয়ে তাঁর লেখাকে সনাক্ত করতে পেরেছেন। তারাই তাঁকে বিশ্বলেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বৃদ্ধি করেছেন নানান পাঠকগোষ্ঠী, যারা প্রায় নীরবে তাঁর লেখার পাঠক হয়ে উঠেছেন, চিনতে পেরেছেন তাঁকে। শব্দ, বাক্য ও বিবরণের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা গল্পে তারা নিজেদের অস্পষ্ট কণ্ঠস্বরকে খুঁজে পেয়ে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষে নোবেল পুরস্কারে মধ্য দিয়ে তিনি পেলেন বিশ্বস্বীকৃতি ও মর্যাদা। এরনোর লেখা হচ্ছে সব ধরনের জীবন ও শ্রেণির প্রত্যক্ষ বিবরণ। তিনি এই জীবনকে সুনির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত তথ্যের সহায়তায় শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখায় পাওয়া যাবে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানান স্বর, শব্দ, মূল্যবোধের কথা। তাদের মর্য়াদার দিকটিও তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এরনোর রচনা তাই বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। কেউ কেউ তাঁর লেখাকে পশ্চিমী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। তিনি অব্যাহতভাবে পরিচয় সংকটের কথা বলে চলেছেন, একে সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন। সকল ধরনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে তিনি লিখে গেছেন। ফলে, তাঁর লেখা রাজনৈতিক নিঃসন্দেহে। কিন্তু তা শুধু শাসকদের ক্ষমতায়নের বিষয় নয়, সমাজে, এমনকি পরিবারের মধ্যেও যে ব্যক্তিস্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলে, যৌনতার মধ্যেও যে একাধিপত্যের বিষয়টি কাজ করে, এর সবকিছুই তিনি উন্মোচন করে দেখিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে তাঁর আখ্যানগুলি ‘উঁচু সংস্কৃতির মহান বয়ান নয়।’ তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তির ফলে আরও একটা বিষয় পাঠক হিসেবে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেটা হলো এনোর লেখাগুলি তথাকথিত গ্রান্ড ন্যারেটিভ নয়। বড় মহৎ কোনো ইতিহাসের বিবরণ নয়, একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র ইতিহাসের বয়ান। ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আখ্যানও যে মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তিনি পাঠককে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এনরোর লেখা পড়লে উপলব্ধি করা যায়, মানবজীবনের ইতিহাস আসলে ব্যক্তিক সামান্য ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে সর্বজনীন করে তোলাটাই জরুরি। লেখক হিসেবে এরনোর অনন্যতা ও গুরুত্ব এখানেই।

 

 

তীরন্দাজ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক অনলাইন পত্রিকা

Edtior's Picks

Latest Articles

Copyright 2022 – Teerandaz

http://www.pixelsdigital.netDeveloped by Pixels Digital