লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এলোমেলো হাঁটছিলাম। যেন ফুলের বাগান, দিকে দিকে থইথই করছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। পথ যেখানেই টানুক ক্ষতি নাই, এমন হেলদোলে নানানভাষী কলকাকলিতে, বিচিত্রবর্ণের মানুষের সম্মেলনের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি। কিন্তু বিদায়ের সুর! প্রিয়জনের বিয়োগের মতো রক্তক্ষরণ নিয়ে এক সেশন থেকে আরেক সেশনে যাই। মন দিয়ে কথাবার্তা শুনি। মাঝেমধ্যে একাডেমির পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি। জনারণ্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মিহিরাতের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আচ্ছা কী এত কথা বলছে এঁরা! মানুষ যখন বনে-জঙ্গলে বাস করত, শিকার করে খেতো তখন সাহিত্য কোন স্তরে ছিল! কোনো এক সন্ধ্যায় একদল মানুষ জড়ো হয়ে যখন মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছিল তখনো তাদের আলোচনায় সাহিত্য ছিল? তারপরেই এক শিকারি তার খাবার পাত্রে ঝলসানো মাংসের সঙ্গে একটা গমের দানার স্বাদ পেল আর লোভে পড়ে ক্রমান্বয়ে গমের দিকে, উৎপাদন আর চাষের দিকে হাঁটা তারপর কৃষিবিপ্লব সক্ষমভাষা, বাকশক্তির উন্মেষ। হারিয়ে গেল মানুষের আদি যাপন আমাদের পূর্বপুরুষরা গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হলো। আহা! সেই গমের দানা! সেটা যদি সেদিন না ফুটত তাহলে আজ আমি হয়তো এই লিট ফেস্টেই থাকতাম না। মানুষের এই পরিবর্তনটা অদ্ভুত সুন্দর।
এবার ঢাকা লিট ফেস্ট বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। কবি-লেখক-সাহিত্যিকের মধ্যে আফ্রিকা প্রাধান্য পেয়েছে। আলোও কেড়েছে। আব্দুলরাজাক গুরনাহ আর নুরুদ্দিন ফারাহ। আফ্রিকার বঞ্চনার ইতিহাস, সংগ্রাম কীভাবে সাহিত্যে প্রবল তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। আফ্রিকার অজস্র ভাষা-ঐতিহ্য ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে মার খেতে খেতে খাদের কিনারে পৌঁছেছে। দাসপ্রথা আর বণবৈষম্যের রোমহর্ষক ঘটনা কে না জানে! এইতো সেদিন তারা এসবের নাগপাশ পেরুলো! আবার সাহিত্যঙ্গনে বীরদর্পে উত্থানও হয়েছে। শুধু তানজানিয়ারই যত নিজস্ব ভাষা, যত বৈচিত্র্য তা তো ভাবায়! এই আফ্রিকার সঙ্গেই একসময় এশিয়াসহ ভারতবর্ষ ছিল। আমরা ছিলাম! আফ্রিকার মানুষের সঙ্গে সভ্যতার বেড়ে ওঠার সঙ্গে যেসব অন্যায় হয়েছে টেকটোনিক প্লেট সরে আসায় আমাদের সঙ্গে তা ঘটেনি। হয়তো তেমনটা না হলে আমরা একই ভূখণ্ডে বাস করতাম তাদের আর আমাদের ভিন্ন বলে কোনোও সংস্কৃতি থাকত না! দূরেই যে শুধু সরে এসেছি তাই-ই নয় ভিন্ন ভাষা, রীতিনীতি ও যাপনে, বলনে-চলনে, খাদ্যাভ্যাসেও ভিন্নতর! কী আশ্চর্য! অথচ আজ আবার একই বিন্দুতে উপনীত করেছে শুধু সাহিত্য। সাহিত্যের এই শক্তি, শিল্পের এই যে ক্ষমতা তা সব কিছুকে এভাবেই সংগঠিত করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের জন্য।
ভাষা নিয়ে আমরাও নিপীড়নে পড়েছিলাম। সেই আগ্রাসনে আমরা ভাষাভিত্তিক একটা দেশই বানিয়ে ফেললাম। মায়ের ভাষাও রক্ষা হলো। অথচ এই লিট ফেস্টে মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে কিছুই উপস্থাপিত হলো না! না ভাষাসৈনিক, না আছে তাদের বীরত্বের বর্ণনা না আছে ইতিহাস-আলোচনা! কেন? এমনকি সব সাইনবোর্ড হোর্ডিংগুলো পর্যন্ত বাংলা ভাষার অক্ষরহীন। আব্দুলরাজাক গুরনাহ শেষের দিনের আলোচনাতেও তার সোহায়েলি ভাষার জন্য আবেগাপ্লুত বক্তব্য দিয়েছেন। কেন তিনি মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করতে পারেননি তাও বলেছেন। তাঁর ১০টা বই সবই ইংরজিতে। হয়তো আজ তার নোবেলপ্রাপ্তি কিংবা বিশ্বাঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে ইংরেজি। কিন্তু মাতৃভাষা! তার জন্য বেদনায় তিনি ন্যুব্জ হয়ে আছেন। মায়ের ভাষাই যে সবার আগে তা বাংলা ভাষার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদাও উচ্চারণ করেছেন। ট্রানজিট ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহণ করা যেতেই পারে। ভাষার সক্ষমতা থাকলে ভিনভাষার যেকোনো শব্দের যদি অনায়াস প্রবেশও ঘটে তাতে ক্ষতি কি! বাংলাভাষায় বহু ভিনদেশি শব্দের ব্যবহার আছে। আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আত্মস্থ করেছি।
চারদিনের আয়োজনে দেশ-বিদেশের ৫ শতাধিক কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তকদের লিট ফেস্টের এই সমাবেশ ১০ বছরে এসে ঠেকল। এবার মোট সেশন হলো ১৭৫টি। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও বাংলাদেশে সাহিত্য নিয়ে এমন সরগরম আয়োজন ছিল না। আশির দশকে বইমেলার শুরু। বইমেলা একুশের চেতনায় সমুজ্জ্বল সেখানে যেমন অন্যভাষার রচনাবলি নিয়ে স্টল-প্যাভেলিয়ন থাকে না তেমনি ভিনভাষীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। ফলে এই ধরনের সম্মিলন থাকে না কেবল পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপস্থিতি ছাড়া। সেই অর্থে লিট ফেস্ট-ই একমাত্র আয়োজন যেখানে বহু ভাষার, বহুচিন্তার-সাহিত্যের মিলন ঘটে। এখানে যে যে পেশারই থাকুক তারা উৎসব চলাকালীন সাহিত্যেরই সেবা করছে। ব্যাপারটা ভালো। সে ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পেশায় চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী। তাদের আচরণ, কথাবার্তা সবই সাহিত্যসুলভ। আহা! যদি বারো মাসই থাকত! সাহিত্যের সঙ্গে তেমন যোগসূত্র নেই তারাও এই শীত উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে উৎসবে হাজির। এই যে টান! এটাই সাহিত্যের জয়। এই সর্বজনীনতাই সাহিত্যকে সবার মধ্যে একটা আন্দোলনের পথে ধাবিত করতে পারে। যেখানে সবারই কণ্ঠ এক, সুরও এক। লিট ফেস্টেরও জয় সেখানে।
দুয়েকটা ব্যতিক্রম বাদে আমাদের সংস্কৃতি কেমন তা না বলেও, ঘটা করে সেসব বিষয়ে কথা না বললেও বাংলাদেশে এসে ভিনভাষীরা তা বুঝে গেছেন। সামান্য যে কয়েকটা পরিবেশনা ছিল তাতেই মুগ্ধ তারা। রবীন্দ্রসংগীত আর ত্রিপুরা নৃত্যের কথা আলাদাভাবে বলা যায়। এখানেই আমাদের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, ঐতিহ্য আর পরম্পরার প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালিয়ানা নিয়ে আয়োজন ছিল সীমিত, তাতেও ফুটে উঠেছে। আমাদের পিঠাপুলি, গ্রামীণ রীতিনীতি, বাংলার যাত্রা, পুতুলনাচ, লোকশিল্প, হস্ত-কুটিরশিল্প সবই ছিল। বিদেশি সাহিত্যিক যারা এর আগে বাংলাদেশে আসেননি তারা ভাবতেন এদেশের মানুষ গোড়া, নারীরা সবাই বোরকা পরে থাকে, কথা বলে-টলে না। ধর্মান্ধ, মৌলবাদীই বেশি। কিন্তু পথেঘাটে স্বাধীন মানুষ, তাদের আচরণ, কথাবার্তা, আতিথেয়তা, সৌজন্য দেখে ধারণা পাল্টেছে। সাহিত্যমনস্কতা-উন্মাদনায় তাদের হতবিহ্বলতা আড়াল করতে পারেনি। তাদের কাছে আমাদের সাহিত্য পৌঁছেনি। পৌঁছে দেওয়ার আকুলতা বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের তাও সামনে এসেছে। অনুবাদ নিয়ে কাজ করার আহ্বান ছিল সবার কণ্ঠেই। কিন্তু কে করবে সেই কাজ তা নিয়ে কোনো সুচিন্তিত বার্তা কেউ-ই দিতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাংলা বিশ্বসাহিত্য সভার আলোচনাটাকে তিনি জীবন্ত করেছেন। এমন একটা আয়োজনে শুধু বাংলা সাহিত্যবিষয়ক দীর্ঘ আলোচনা থাকবে বিশ্বসাহিত্যের সাহিত্যিকদের জন্য। যেখানে শুধু বাংলাকেই তুলে ধরা হবে। নোবেলপ্রাপ্তির তালিকায় বাংলা সাহিত্যের অন্তত ৮/১০ জনের নাম থাকা অবাক হওয়ার নয় এমন চাউর হওয়া কথাটা কিন্তু অমূলক নয়।
আমাদের শুধু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনার। এই লিট ফেস্ট নিয়ে সংস্কৃতজনদের পরামর্শ নেওয়া হলে হয়তো তারাও ভূমিকা রাখতে পারতেন। সেটা হয়নি। বিদেশি লেখকরা বাংলা সাহিত্য জানেন না। একই লেখককে পরপর তিনবার অতিথি করলে এদেশীয় সাহিত্য সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারতেন। ‘মন খারাপ হয়ে যায় যখন ক্যামেরার লেন্সে ভিনভাষী নোবেলজয়ীদের ছবি তুলতে হয় অথচ আমি চাই আমার দেশের, বাংলা ভাষার লেখকদের ছবি তুলতে।’ এমন আক্ষেপ নিয়ে প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন বললেনও বেশ কজন সাহিত্যিকের নাম।
সাধারণ দর্শনার্থী যারা টিকিট কেটে উৎসবে এসেছেন কিংবা দেশীয় সাহিত্যিকরা। তারাও সর্বাবস্থায় শিল্প-সাহিত্য-কলা-সংগীত নানা বিষয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন। থরে-থরে এই যে আলোচনা তার সৌন্দের্য সাদা চোখেও রঙিন লাগে। কথা হলো মূল সেশনগুলোতে বাংলার ভাববাদ-দর্শন, আউল-বাউল, সুফিদের নিয়ে আলোচনা থাকতে পারত। উঠে আসতে পারত লালন, হাছন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছনের কথা গত শতাব্দীতে বলেছিলেন ব্রিটেনে এক আলোচনায়। অজপাড়াগাঁর এক সাধক-কবি, কত বড় মাপের দার্শনিক! আমরা তাকেও তুলে আনতে পারলাম না লিট ফেস্টে। লালনের সাহিত্য-দর্শন, আরজ আলী মাতবরদের চিন্তা বিশ্ববাসীকে জানানোর একটা প্লাটফর্ম তো লিট ফেস্ট-ই হতে পারত! সেই আফসোসটা রয়ে গেল।
নোবেলজয়ীদের দেখতে, কথা শুনতে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে? এমন প্রশ্ন ছিল দিকে দিকে। আবার বিশ্বখ্যাত লেখকদের ভিড়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিক্রিয়াও আছে। নির্মলেন্দু গুণের মতোন কবিকে এবার পায়নি ঢাকা লিট ফেস্ট। গুণকে ছাড়া লিট ফেস্ট তাও আবার তাঁর জীবদ্দশায়! এই দৈন্য কার! আয়োজকরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশি সাহিত্যিক আনতে পারলে কেন ১০ হাজার টাকা সম্মানীও বাংলাভাষার কবির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় না? তাঁর কবিতা পড়েছেন উৎসবে আয়োজকদের আমন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের কবি জয় গোস্বামী। এই ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজকদের আহাম্মকও বলেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার গুরুত্বর্পণ কবি-লেখকরা আয়োজনে থাকলে হয়তো তাদের সেশনগুলোতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যসহ নানাবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারতেন ভিনভাষীরা। তুলনামলূক সাহিত্য আলোচনা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল বিশ্বসাহিত্য। উৎসবজুড়ে বাংলার ব্যবহারও ছিল দৃষ্টিকটু, সীমিত। বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিকদের ভিনভাষীদের সেশনে উপস্থিত থাকা ছাড়া সম্ভবত আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ সেই অর্থে ছিল না। কবিতা পাঠেও যারা আমন্ত্রিত হওয়ার কথা সেখানেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, এই মেলা নিয়ে একটি যোগ্য সমালোচনার দরকার ছিল, সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য। সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা ছিল, সম্ভবত, এদেশে যারা সত্যিকারের সাহিত্যচর্চা করেন, তাদের অনুপস্থিতি। সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন এনজিও এবং করপোরেট কর্তাব্যক্তিরা। ধনী ব্যক্তিদের সাহিত্য মেলাই হয়েছে। কিছু কিছু প্যানেলে যাদের ধরে আনা হয়েছে, প্যানেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আয়োজক সংস্থায় কাজ করা বা তাঁদের বন্ধুবান্ধব হওয়া ছাড়া তাঁদের নিজেদের কন্টেন্ট সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।’
একই ভাবে হাসনাত আবদুল হাইয়ের মতো বর্ষীয়ান লেখককে শুধুমাত্র শ্রোতা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও আয়োজকদের পিণ্ডি চটকেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত লেখকরা।
লিট ফেস্ট এলিটদের নাকি প্রলেতারিয়েতদের? এমন বিতর্ক নিয়েও কথা বলেছেন কবি-লেখকরা। তবে এসব বাদে, মিলনমেলা যাকে বলা যায় তার অনেক কিছুই উঠে এসেছে। ভিনভাষীদের সঙ্গে সাহিত্যবিষয়ক আড্ডা-আলোচনা-বিনিময়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে উগ্রবাদ- মৌলবাদের নিন্দা একই সঙ্গে উদারবাদের পক্ষে অবস্থান এক শিল্পিত চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। সমস্ত রকমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভাষা এবং সংস্কৃতিকে উচ্চকিত রাখার প্রশ্নে এই যে সবাই একমত, নিঃসন্দেহে তা আনন্দের। স্বাধীনতা হরণ কিংবা দখলদারিত্ব আর একনায়ত্বসূলভ শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলিয়েছেন সাহিত্যিকরা। নুরুদ্দিন ফারাহ্’র প্যানেল আলোচনাতেও তা ধ্বনিত হয়েছে।
চিন্তা ও চিন্তকদের সম্মিলন, বড় চিন্তা কিংবা বড় লেখক সবাই সত্যিকারের সাহিত্য নিবেদিত বলেই মনে হয়েছে। ভার্চুয়াল এই সময়ে মানুষের সম্পর্ক এবং কবিতা-সাহিত্য কীভাবে দিনবদলের পন্থায় পরিচালিত করা যায় এবং তার প্রয়োগ ঘটানো যায় সেইসব মতামত গুরুত্ব পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য হ্রাস, মি-টু আন্দোলন, উদ্ভিদ বা প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় লেখকদের ভূমিকা কী হতে পারে সেসবের দীর্ঘ সেশন দরকার ছিল।
বাংলা একাডেমিতে এই আয়োজন না করে আয়োজকরা কোনো পাঁচতারা হোটেল কিংবা নিজেদের মালিকানাধীন ইউল্যাব ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত প্রদর্শনী হিসেবে করলে অবশ্য এত সমালোচনার কিছুই হয়তো উঠত না।
প্রযুক্তির এই বিকাশমান সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিনোদনে মানুষের অনাগ্রহকেই যেখানে স্বাভাবিক আচরণ ভাবা হয় সেখানে সেইসব দিক বিবেচনায় দশম আসরের এই লিট ফেস্ট আয়োজন কিছুটা হলেও হালে পানি সঞ্চার করেছে। তর্ক আর প্রতিতর্কের এই যে উপলক্ষ তৈরি করে দেওয়া এ উৎসব তো সেখানেই সফল।
সৌজন্যে : দেশ রূপান্তর